Product details
কুমড়া কেন খাবেন
মিষ্টিকুমড়া দেখতে যেমন মোটাসোটা নাদুসনুদুস, এর পুষ্টিগুণও তেমনি ব্যাপক। আসলে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ভিটামিনের একটি ভান্ডার এই কুমড়া। এসব গুণাগুণের কথা না জেনেই তরকারি হিসেবে কুমড়া অনেকেরই পছন্দ। আর এই সবজির গুণের তালিকা জানা থাকলে পছন্দের মাত্রা নিশ্চয় আরও বেড়ে যাবে। কুমড়ার পুষ্টিগুণ: এতে আছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই (আলফা টোকোফেরল), থায়ামিন, নিয়াসিন, ভিটামিন বি৬, আয়রন, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস ও উচ্চমাত্রার খাদ্য আঁশ।স্বাস্থ্য-সুবিধা: অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই শরীর ও ত্বকের জন্য উপকারী হিসেবে কাজ করে। বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় এবং হূদেরাগ থেকে প্রতিরক্ষা দেয়। আর কুমড়ার পটাসিয়াম উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি হ্রাস করে এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। শরীরের ওজন কমাতেও সহযোগিতা করে এটি। খাদ্য আঁশের অন্যতম উৎস কুমড়ার বিচি। এটি হূৎস্বাস্থ্যের জন্যও খুবই উপকারী। কুমড়ার বিচি ভেজেও খাওয়া যায়। গালফ নিউজ।
মিকা
মিষ্টি কুমড়া বর্ষজীবী লতানো উদ্ভিদ। মিষ্টি কুমড়ার শিকড় যথেষ্ট বিস্তৃত।
কচি মিষ্টি কুমড়া সবজি হিসেবে এবং পাকা ফল দীর্ঘদিন রেখে সবজি হিসেবে
ব্যবহার করা যায়। পরিপক্ক ফল শুষ্ক ঘরে সাধারণ তাপমাত্রায় প্রায় ৪-৬ মাস
সংরক্ষণ করা যায়। মিষ্টি কুমড়া ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রনে কাজ করে
মাটির বৈশিষ্ট
চরাঞ্চলের পলি মাটিতে মিষ্টি কুমড়া ভালো ফলন হয়। জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোঁ-আশ
বা এঁটেল দোঁ-আশ মাটি এর চাষাবাদের জন্য উত্তম। মিষ্টি কুমড়ার জন্য মাটির
সর্বোত্তম অম্ল-ক্ষারত্ব ৫.৫-৬.৮।
চাষের মৌসুম
বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বছরের যে কোনো সময় মিষ্টি কুমড়ার বীজ বোনা যায়।
শীতকালীন ফসলের জন্য অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এবং গ্রীষ্মকালীন ফসলের জন্য
ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত বীজ বোনার উপযুক্ত সময় তবে বীজ উৎপাদনের
জন্য নভেম্বরের মধ্যভাগে বীজ বপন করা উত্তম।
চারা উৎপাদন
# পলিব্যাগে চারা উৎপাদন
# পলিব্যাগে মিষ্টি কুমড়ার চারা উৎপাদনের ক্ষেত্রে ৩X৪ ইঞ্চি (৮X১০(সে.মি) আকারের পলিব্যাগ ব্যবহার করা হয়।
# অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের জন্য ছিদ্রযুক্ত পলিব্যাগে ব্যবহার করতে হবে।
পলিব্যাগে বীজ বপন
# প্রথমে অর্ধেক মাটি ও অর্ধেক গোবর মিশিয়ে মাটি তৈরি করে নিতে হবে।
মাটিতে বীজ গজানোর জন্য “জো” নিশ্চিত করে (মাটিতে “জো” না থাকলে পানি দিয়ে
“জো” করে নিতে হবে) তা পলিব্যাগে ভরতে হবে।
# অতঃপর প্রতি ব্যাগে দুইটি করে বীজ বুনতে হবে। বীজের আকারের দ্বিগুণ মাটির গভীরে বীজ পুঁতে দিতে হবে।
বীজের পরিমাণ
মিষ্টি কুমড়া চাষের জন্য শতাংশ প্রতি ২.৫ গ্রাম পরিমাণ বীজের প্রয়োজন হয়।
সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি (কেজি শতাংশ)
সার কম উর্বর মধ্যম উর্বর বেশি উর্বর
পচাগোবর/কম্পোষ্ট ৩২ ২৪ ১৬
ইউরিয়া ০.৫২ ০.৪৪ ০.৩৬
টিএসপি ০.৮ ০.৭ ০.৬
এমোপি ০.৬০ ০.৫২ ০.৪৪
জিপসাম ০.৪৪ ০.৩২ ০.২৪
দস্তা ০.০৫ ০.০৩ ০.০২
বোরিক এসিড ০.০৪ ০.০৩ ০.০২
ম্যাগনেশিয়াম ০.২ ০.১ ০.০৮
খৈল ২.০ ১.৬ ১.২
প্রয়োগ পদ্ধতি
মূল জমি তৈরীর সময় জৈব সার, টিএসপি, দস্তা, ম্যাগনেসিয়াম ও বোরিক এসিডের
অর্ধেক অংশ প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক জৈব সার, টিএসপি, দস্তা,
ম্যাগনেসিয়াম ও বোরিক এসিড মাদায় প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া ও এমওপি সমান
তিনভাগে ভাগ করে বীজ বপনের সময় প্রথম ভাগ, ১৫-২০ দিন পর দ্বিতীয় ভাগ এবং
৩৫-৪০ দিন পর তৃতীয়ভাগ প্রয়োগ করতে হবে।
চারা রোপন
# চারা বয়সঃ বীজ গজানোর পর ১৫-১৬ দিন বয়সের চারা মাঠে লাগানোর জন্য উত্তম।
# পলিব্যাগের ভাঁজ বরাবর ব্লেড দিয়ে কেটে পলিব্যাগ সরিয়ে মাটির দলাসহ
চারাটি নির্দিষ্ট জায়গায় লাগিয়ে চারপাশে মাটি দিয়ে ভরাট করে দিতে হবে। চারা
লাগানোর পর গর্তে পানি দিতে হবে।
জাতসমূহ
লাল তীর সীড লিমিটেড উদ্ভাবিত ও বাজারজাতকৃত জাতসমূহ নিম্নরূপ
সুপ্রিমা
সুপ্রিমা একটি হাইব্রিড জাত। এটি চ্যাপ্টা, গোলাকার ও অগভীর দাঁড়া উঠানো
ফল। মাংসল অংশ বেশ পুরু ও গাঢ় হলুদ। ফলের গড় ওজন ৪-৫ কেজি। কাঁচা ও পাকা
দুই ভাবেই খাওয়া যায়।
রোপনের সময়ঃ আগস্ট-ফেব্র্বয়ারি
ফসল তোলার মেয়াদঃ ৭৫-৮০ দিন।
সুইটি
দিবস নিরপেক্ষ হাইব্রিড জাত। সারা বছর চাষযোগ্য। ফল চ্যাপ্টা এবং ভিতরের
মাংসল অংশ বেশ পুরু ও গাঢ় হলুদ। প্রতিটি ফলের গড় ওজন ৭-৮ কেজি। কাঁচা ও
পাকা দুই ভাবেই খাওয়া যায়।
রোপনের সময়ঃ ১২ মাস।
ফসল তোলার মেয়াদঃ ৭৫-৮০ দিন।
ফলনঃ ১৮-২০
ড্রিমগোল্ড
দিবস নিরপেৰ হাইব্রিড জাত। সারা বছর চাষযোগ্য। মাংসল অংশ বেশ পুরু এবং ফলের গড় ওজন ৫-৬ কেজি। কাঁচা ও পাকা দুই ভাবেই খাওয়া যায়।
রোপনের সময়ঃ ১২ মাস।
ফসল তোলার মেয়াদঃ ৭৫-৮০ দিন।
ফলন (টন/একর) ১৮-২০
সলিড গোল্ড
দিবস নিরপেক্ষ হাইব্রিড জাত। বহিঃত্বক হালকা খাজযুক্ত। মাংসল অংশ পুরু এবং
গাঢ় হলুদ বর্ণের। ফল ডোমাকৃতির এবং গড় ওজন ৫-৬ কেজি। রাজশাহী অঞ্চলের জন্য
খুবই উপযোগী।
রোপনের সময়ঃ ১২ মাস।
ফসল তোলার মেয়াদঃ ৭৫-৮০ দিন।
ফলন (টন/একর) ১৮-২০
পোকামাকড় ও দমন ব্যবস্থাপনা
মিষ্টি কুমড়ার মাছিপোকা
ক্ষতির ধরণ
১. এই পোকা মিষ্টি কুমড়ার কচিফল ও ফুলের মধ্যে প্রথমে ডিম পাড়ে।
২. পরবর্তীতে ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে ফল ও ফুলের ভিতর কুরে কুরে খায় যার ফলে ফল ও ফুল পচন ধরে নষ্ট হয়ে যায়।
৩. এই পোকার আক্রমণের ফলে প্রায় ৫০-৭০ ভাগ ফল নষ্ট হয়ে যায়।
দমন ব্যবস্থাপনা
১.আক্রান্ত ফল সংগ্রহ করে তা নষ্ট করে ফেলতে হবে।
২. পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ।
৩. সেক্স ফেরোমন ফাঁদের ব্যবহার
৪. মাছির আক্রমণ থেকে ফসল রৰা করার জন্য বিষটোপ অত্যন্ত কার্যকর।
রেড পামকিন বিটল
ক্ষতির ধরণ
# পামকিন বিটলের পূর্ণবয়স্কপোকা চারা গাছের পাতায় ফুটো করে এবং পাতার কিনারা থেকে খাওয়া শুরু করে সম্পূর্ণ পাতা খেয়ে ফেলে।
# এ পোকা ফুল ও কচি ফলেও আক্রমণ করে।
দমন ব্যবস্থাপনা
# চারা আক্রান্ত হলে হাত দিয়ে পূর্ণবয়স্ক পোকা ধরে মেরে ফেলে।
# ক্ষেত সব সময় পরিষ্কার রাখা।
জাবপোকা
ক্ষতির ধরণ
১. জাবপোকার আক্রমণে মিষ্টি কুমড়ার বাড়ন্ত ডগা ও পাতা হলুদ হয়ে যায়। গাছ
তার সতেজতা হারিয়ে ফেলে এবং ফলন গুরুতর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
২. প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক জাবপোকা দলবদ্ধভাবে গাছের পাতার রস চুষে খায়।
ফলে পাতা বিকৃত হয়ে যায়, বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও প্রায়শ নিচের দিকে কোঁকড়ানো
দেখা যায়।
৩. মেঘলা, কুয়াশাচ্ছন্ন এবং ঠান্ডা আবহাওয়ায় জাবপোকার বংশ বৃদ্ধি বেশি হয়। প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হলে এদের সংখ্যা কমে যায়।
দমন ব্যবস্থাপনা
১. প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত পাতা ও ডগার জাবপোকা হাত দিয়ে পিষে মেরে ফেলা যায়।
২. নিমবীজের দ্রবণ বা সাবানগোলা পানি সেপ্র করেও এ পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কমে যায়।
৩. বন্ধু পোকাসমূহ সংরক্ষণ করলে এ পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কম হয়।
রোগবালাই ও প্রতিকার
সাদা গুঁড়া রোগ বা পাউডারি মিলডিউ
ক্ষতির লক্ষণ
১. রোগের প্রারম্ভে গাছের নিচের বয়স্ক পাতায় রোগের লৰণ প্রকাশ পায়। ক্রমশ উপরের পাতায় রোগ ছড়িয়ে পড়ে।
২. প্রথমে পাতার উপর বিক্ষিপ্ত সাদা সাদা দাগের সৃষ্টি হয়।
৩. রোগ বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে দাগ আকারে বড় হতে থাকে এবং হলুদ বর্ণ থেকে বাদামী রঙ ধারণ করে।
৪. রোগের প্রকোপ বেশি হলে গাছের লতা ও কান্ড আক্রান্ত হয়। ধীরে ধীরে সেই লতা ও পরে পুরো গাছই মরে যেতে পারে।
দমন ব্যবস্থাপনা
১. রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য লাউ ও কুমড়াজাতীয় আগাছা বিনাশ করতে হবে।
২. জমির আশে-পাশে কুমড়া জাতীয় যে কোন সবজি চাষ থেকে বিরত থাকা
৩. আগাম চাষ করে রোগের প্রকোপ কমানো যায়।
৪. প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম ইনসাফ/থিয়ভিট বা সালফোলাঙ/কুমুলাস অথবা
১০ গ্রাম ক্যালিঙিন ১৫ দিন পর পর সেপ্র করে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা।
ডাউনি মিলডিউ
ক্ষতির লক্ষণ
১. এই রোগ শুধু পাতায় হয়। আক্রান্ত পাতায় নানা আকারের দাগ পড়ে। সাধারণত দাগগুলি কোণাকৃতি ও হলদে হয়।
২. দাগগুলি খুব তাড়াতাড়ি সংখ্যায় বৃদ্ধি পায় ও আকারে বড়ো হয়। পাতার নিচে দিকে দাগের উপরে বেগুনি রংয়ের ছত্রাক জন্মে।
দমন ব্যবস্থাপনা
১. রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য লাউ ও কুমড়াজাতীয় আগাছা বিনাশ করতে হবে।
২. জমির আশেপাশে কুমড়া জাতীয় যে কোনো সবজি চাষ থেকে বিরত থাকা।
৩. আগাম চাষ করে রোগের প্রকোপ কমানো যায়।
আমাদের দেশে প্রায় সব অঞ্চলেই বিভিন্ন ধরণের শাকসবজির চাষ করা হয়। শাকসবজির মধ্যে মিষ্টি কুমড়া হচ্ছে অন্যতম। এর ইংরেজি নাম Sweet pumkin ও বৈজ্ঞানিক নাম Cucurbita moschata. এটি সারাবছরই বাড়ির আঙ্গিনায় ও মাঠে চাষ করা যায়। আমাদের দেশের প্রায় সব জায়গাতেই মিষ্টি কুমড়া জন্মায়। বর্তমানে আমাদের দেশের অনেক স্থানে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ ও বাজারজাত করা হচ্ছে।
পুষ্টিগুন
মিষ্টি কুমড়ায় প্রচুর ভিটামিন-এ আছে।
বাজার সম্ভাবনা
আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির উপর নির্ভর করে। মিষ্টি কুমড়া হচ্ছে এক ধরণের সুস্বাদু ও পুষ্টিকর সবজি। এর পাতা ও কান্ড সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। মিষ্টি কুমড়া তরকারি ও ভাজি হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে। মিষ্টি কুমড়া চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাড়তি আয় করাও সম্ভব। এছাড়া দেশের চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত উৎপাদন বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সহায়তা দিয়ে থাকে। মিষ্টি কুমড়া বিদেশে রপ্তানি করার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
জমি তৈরি
১. ভালো ফলন পেতে হলে জমি গভীরভাবে চাষ করতে হবে।
২. মাটি ও জমির প্রকারভেদে ৫-৬টি চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করে নিতে হবে।
৩. শীতকালীন চাষের সময় জমিতে রসের পরিমাণ কম থাকলে প্রয়োজনে জমি চাষের আগে সেচ দিয়ে নিতে হবে।
বীজ বপন ও চারা রোপণ
১. মিষ্টি কুমড়ার বীজ সরাসরি জমিতে রোপণ করা যায়। তবে ছোট আকারের পলিথিন ব্যাগে চারা উৎপাদন করে তা জমিতে রোপণ করলে ভালো হয়।
২. চারা রোপণের মাস খানেক আগে জমিতে ১.৫ ফুট X ১.৫ ফুট মাপের গর্ত তৈরি করে নিতে হবে।
৩. সারি তৈরি করে তাতে গর্ত খুঁড়লে তা চাষের জন্য ভালো। এক সারি থেকে অপর সারির দূরত্ব ৬ ফুট রাখতে হবে।
৪. এক গর্ত থেকে অপর গর্তের দূরত্ব ৬ ফুট রাখতে হবে।
৫. চারা রোপণের ১০-১২ দিন আগে গর্তের মাটির সাথে জৈব সার মিশিয়ে রাখতে হবে।
সার প্রয়োগ
কৃষকদের মতে গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে হলে মিষ্টি কুমড়া চাষের জমিতে যতটুকু সম্ভব জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরণ অনুয়ায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশ উভয়ই ভালো থাকবে। বাড়িতে গবাদি পশু থাকলে সেখান থেকে গোবর সংগ্রহ করা যাবে। নিজের গবাদি পশু না থাকলে পাড়া-প্রতিবেশি যারা গবাদি পশু পালন করে তাদের কাছ থেকে গোবর সংগ্রহ করা যেতে পারে। এছাড়া ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে আবর্জনা পচা সার ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়ির আশে-পাশে গর্ত করে সেখানে আবর্জনা, ঝরা পাতা ইত্যাদি স্তুপ করে রেখে আবর্জনা পচা সার তৈরি করা সম্ভব।
সেচ ও নিষ্কাশন
১. সার দেওয়ার পর হালকা সেচ দিয়ে মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে।
২. শীতকালীন চাষের জন্য এক মাস পর পর জমিতে সেচ দিতে হবে।
৩. মিষ্টি কুমড়া চাষের সময় জমিতে জল বেশি সময় জমতে দেওয়া যাবে না।
রোগবালাই
মিষ্টি কুমড়ার ক্ষেতে মাছির আক্রমণ হয়ে থাকে।
প্রতিকার
মাছির আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষার জন্য বিষটোপ অত্যন্ত কার্যকরী। এছাড়া ফসলে পোকার আক্রমণ হলে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে পোকা দমন না হলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃষি অফিসে পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করা যেতে পারে।
চাষের সময় পরিচর্যা
১. চাষের সময় মাটির ঢেলা ভেঙ্গে দিতে হবে।
২. গাছের বাউনি ও অন্যান্য যত্ন করতে হবে।
৩. জমিতে আগাছা জন্মাতে দেওয়া যাবে না। আগাছা জন্মালে তা নিড়ানির সাহায্যে তুলে ফেলতে হবে।
৪. কৃত্রিম পদ্ধতিতে পুরুষ ফুলের রেণু স্ত্রী ফুলের উপর ছড়িয়ে দিলে উৎপাদন বাড়বে।
৫. গাছের গোড়ার দিকে ছোট ছোট শাখা-প্রশাখা বের হয়। এগুলোকে শোষক শাখা বলে। শোষক শাখা গাছের বৃদ্ধিতে বাধা দেয় ও ফলন কমিয়ে দেয়। তাই গাছের গোড়ার দিকে ১৬-১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত ডালপালা ধারালো ব্লেড বা ছুরি দিয়ে কেটে ফেলতে হবে।
ফসল সংগ্রহ
মিষ্টি কুমড়া পরিণত হলে গাছ থেকে তা সংগ্রহ করতে হবে। সাধারণত বীজ বপন বা চারা রোপণের ৩ থেকে ৪ মাস পর গাছ থেকে মিষ্টি কুমড়া তোলার উপযোগী হয়। ফল হলুদ বা হলদে বাদামী রঙ ধারণ করে। ফলের বোঁটা খয়েরী রঙ ধারণ করে এবং গাছ মরতে শুরু করে। পাকা কুমড়া সংগ্রহ করে ৫-৭ দিন ছায়াযুক্ত স্থান রেখে দিতে হবে।
উৎপাদিত ফসলের পরিমাণ
১ বিঘা ( ৩৩ শতাংশ ) জমি থেকে এক মৌসুমে প্রায় ২৫০ টি মিষ্টি কুমড়া পাওয়া যায়।
সচরাচর জিজ্ঞাসা
প্রশ্ন ১ : প্রতিবিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষের জন্য কি পরিমাণ বীজের প্রয়োজন হয় ?
উত্তর : প্রতিবিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষের জন্য ১৩০ থেকে ২০০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।
প্রশ্ন ২ : কোন ধরণের মাটি মিষ্টি কুমড়া চাষের জন্য উপযোগী ?
উত্তর : মিষ্টি কুমড়া প্রায় সব ধরণের মাটিতে চাষ করা যায়। তবে দো-আঁশ ও এঁটেল দো-আঁশ মাটিতে এর ফলন ভালো হয়।
প্রশ্ন ৩ : কোন সময়ে মিষ্টি কুমড়ার বীজ বপন করা হয় ?
উত্তর : মিষ্টি কুমড়া সারাবছরই চাষ করা হয়। শীতকালীন চাষাবাদের জন্য ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্তিক মাসের মাঝামাঝি (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) মাসে বীজ বপন করা হয়। তবে আগাম শীতকালীন ফসলের জন্য ভাদ্র মাসের ১ম সপ্তাহ (আগস্ট মাসের মাঝামাঝি) এবং রবি মৌসুমে চাষের জন্য মাঘ-ফাল্গুন মাসে (জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি-মার্চ মাসের মাঝামাঝি) বীজ বপন করা হয়।
মিষ্টি কুমড়া এক ধরনের কোমল কাণ্ডবিশিষ্ট বর্ষজীবী লতানো উদ্ভিদ। কাণ্ড দৃঢ়, হালকা সবুজ, অগভীর খাদবিশিষ্ট এবং তীক্ষ্ম কোমল লোমে আবৃত। গাছের গোড়ার দিকে আইক থেকে কয়েকটি প্রধান শাখা বের হয়। এগুলো ক্রমশ প্রশাখায় বিভক্ত হয়। আমাদের দেশে কচি শাখা-প্রশাখাগুলো পুষ্টিসমৃদ্ধ সবজি হিসেবে খেয়ে থাকে। আমাদের দেশে প্রায় সব অঞ্চলেই বিভিন্ন ধরণের শাকসবজির চাষ করা হয়। শাকসবজির মধ্যে মিষ্টি কুমড়া হচ্ছে অন্যতম। এর ইংরেজি নাম Sweet pumkin ও বৈজ্ঞানিক নাম Cucurbita moschata. এটি সারাবছরই বাড়ির আঙ্গিনায় ও মাঠে চাষ করা যায়। আমাদের দেশের প্রায় সব জায়গাতেই মিষ্টি কুমড়া জন্মায়। বর্তমানে আমাদের দেশের অনেক স্থানে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ ও বাজারজাত করা হচ্ছে।
মিষ্টি কুমড়ার জাত :
বারি মিষ্টি কুমড়া-১, বারি মিষ্টি কুমড়া-২ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত ২টি উন্নত জাত। বারি মিষ্টি কুমড়া-১ জাতটি ভাইরাস সহনশীল। হাইব্রিড জাতগুলোর মধ্যে সুপ্রিয়া, সুইটি, ড্রিমগোল্ড, সলিডগোল্ড, ব্যাংকক-১, ব্যাংকক-২, পিকে-১, শান্তি-১, শান্তি- ২ ইত্যাদি বেশ জনপ্রিয়।
জলবায়ু ও মাটি:
কুমড়ার জন্য উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু প্রয়োজন। তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে চলে গেলে গাছের দৈহিক বৃদ্ধির হার কমে যায়।
জমি তৈরি ও বীজ বপন:
পারিবারিক বাগানে কুমড়ার চাষ করতে হলে সুবিধাজনক স্থানে দু’একটি মাদায় বীজ বুনে গাছ মাচা, ঘরের চাল কিংবা কোন গাছের উপর তুলে দেয়া যেতে পারে। বাণ্যিজিক চাষের ক্ষেত্রে প্রথম ভালোভাবে জমি ৫-১০ সেমি করে কয়েকবার ক্রস চাষ দিয়ে মই দ্বারা সমান করতে হবে। তারপর ১৫-২০ সেমি উঁচু এবং ২.৫ মি বাই ৮মি প্লট তৈরি করে নিতে হবে। প্রতিটি প্লটে ২ মিটার পর পর ৪৫ বাই ৪৫ বাই ৪০ সেমি আকারের পিট তাতে বীজ বপন করতে হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, প্রতিটি প্লটের মাঝে পানি নিষ্কাশনের জন্য সরু নালী এবং জমির চারপাশে অপেক্ষাকৃত মোটা নালী তৈরি করে রাখতে হবে। যাতে প্রয়োজনে পানি নিষ্কাশন করা যায়।
সার ব্যবহার:
ভালো ফলন পেতে মাটির উর্বরতার উপর ভিত্তি করে জমিতে বিভিন্ন সার ব্যবহার করা দরকার। এক্ষেত্রে মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। আমাদের দেশের পেক্ষাপটে প্রতিটি পিটে সার ব্যবহার করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। বীজ বপনের প্রায় ১০-১৫ দিন আগে প্রতিটি প্লটে ১০-১৫ কেজি গোবর সার এবং প্রতিটি পিটে ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৪০ গ্রাম এমপি, ৪০ গ্রাম জিপসাম মাটির সাথে ভালোভাবে মিশ্রিত করে পিট তৈরি করলে ভালো হয়। বীজ অঙ্কুরিত হলে ১৫-২০ দিন পর প্রতিটি পিটে ২০ গ্রাম ইউরিয়া সার মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে।
সেচ প্রদান:
কুমড়া গাছের বৃদ্ধি, ফুল ও ফল ধারনের জন্য মাটিতে রস থাকার প্রয়োজন। শুষ্ক আবহাওয়া থাকলে ৫-৬ দিন পর পর হালকা সেচ দিতে হবে। তবে ফল তোলার তিন সপ্তাহ আগেই সেচ দেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। অপরদিকে বর্ষা বা বৃষ্টির পানি যাতে বেশি দিন গাছের গোড়ায় জমে না থাকে।
ফসল সংগ্রহ:
বীজ বপণের দু’মাসের মধ্যে কুমড়ার গাছ ফল ধরতে শুরু করে এবং রোগাক্রান্ত না হলে আড়াই মাস ব্যাপি ফল দিয়ে থাকে। পরাগায়নের ১০-১৫ দিনের মধ্যে ফল সবজি হিসেবে খাওয়ার উপযোগী হয়। কুমড়ার ফল সংগ্রহের সুনির্দিষ্ট কোন পর্যায় নেই। ব্যবহারের উদ্দেশ্য অনুযায়ী অপক্ক ও পরিপক্ক ফল পাড়া হয়। ফল যত বেশি পাড়া হয় ফলন তত বেশি হয়। সবজি হিসেবে ব্যবহার করতে হলে ওজন আধা কেজি হলেও ফল পাড়া যায়। ফল পরিপক্ক হলে হালকা হলুদ রং ধারণ করে। ফল পাকাতে চাইলে শেষের দিকে গাছে দিতে হবে। ফল পাকালে হেক্টর প্রতি ফলন কমে যায়। তবে সবজি হিসেবে ফল সংগ্রহ করলে হেক্টর প্রতি ২০ টন ফলন পাওয়া যায়।